ব্রেকিং নিউজ
মাদারীপুরের রাজৈর উপসর্গহীন ৭ জনের করোনা শনাক্ত

মাদারীপুরের রাজৈর উপসর্গহীন ৭ জনের করোনা শনাক্ত

মাদারীপুরের রাজৈরে কোনো উপসর্গ ছাড়াই নতুন করে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই করোনায় আক্রান্ত এক ইমামের সংস্পর্শে এসেছিলেন। বাকি একজন ঢাকাফেরত। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল।

নতুন আক্রান্ত সাতজনই পুরুষ। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই রাজৈর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। এই ছয়জনের মধ্যে দুজন বাবা-ছেলে রয়েছেন। তাঁরা একটি মামলার পলাতক আসামি। বর্তমানে তাঁদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। একজন রাজৈর পৌরসভার বাসিন্দা। কয়েক দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় এসে স্বেচ্ছায় নমুনা দেন।

এ নিয়ে রাজৈর উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জনে। আর জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তির মোট সংখ্যা হলো ৪৮। শিবচরের আক্রান্ত ২৩ জনের মধ্যে মারা গেছেন ২ জন। বাকি ১১ জনের ১০ জন সদর উপজেলা ও ১ জন কালকিনি উপজেলার বাসিন্দা।

রাজৈর উপজলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, ৩ মে রাজৈর উপজেলার একটি মসজিদের ২৬ বছর বয়সী এক ইমাম জ্বর, ঠান্ডা ও গলাব্যথা নিয়ে নিজ বাড়ি ফরিদপুরে যান। যাওয়ার পথে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এক দিন পরে আসা প্রতিবেদনে ওই ইমামের করোনা শনাক্ত হয়। এরপরই রাজৈর উপজেলায় তাঁর কর্মস্থল মসজিদের আশপাশে থাকা অন্তত ৫০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে ওই ইমামের সংস্পর্শে আসা ৪৭ জনকে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়। ৪৭ জনের মধ্যে ৫ মে ২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৬ জনের পজিটিভ ও ২৩ জনের নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে।

জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার হটস্পট হতে চলেছে রাজৈর উপজেলা। এখানে ক্রমেই করোনা শনাক্ত বাড়ছে। আজ (শুক্রবার) নতুন সাতজনের মধ্যে ছয়জন এক ইমামের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ, ওই ইমাম দিনে পাঁচবার মসজিদে নামাজ পড়িয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে অনেকেই একসঙ্গে বসে নামাজ আদায় করেছেন। ইমামের কাছাকাছি থাকায় তাঁর মাধ্যমেই সংক্রমণ ছড়ায়। ওই এলাকা থেকে আমরা আরও নমুনা সংগ্রহ করছি। এমনকি নতুন আক্রান্তদের দ্বারা কন্টাক্ট ট্রেসিংয়েরও কাজ শুরু করেছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই ইমামের করোনা শনাক্ত নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা তাঁর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ করতে ও তাঁদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে ২৫ নম্বর লুন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাজাদা পারভেজকে ওই এলাকায় পাঠানো হয়। এ সময় গ্রামবাসী তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। তাঁরই করা মামলায় আসামি নতুন আক্রান্ত ছয়জনের দুজন বাবা-ছেলে।’

এ সম্পর্কে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শওকত বলেন, ‘গত বুধবার ওই শিক্ষকের ওপর হামলা হলে বৃহস্পতিবার তিনি আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার পর থেকেই নতুন আক্রান্ত বাবা-ছেলে এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছেন। আমরা তাঁর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি এবং জানিয়েছি আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার করব না। তিনি যেন নিজে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় বাড়িতে চলে আসেন। না হলে সবার বিপদ বাড়বে।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, গত ৩ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ৮৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৯ জনের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ জনের প্রতিবেদন আসে। এর মধ্যে ৭ জনের পজিটিভ ও ৮৭ জনের নেগেটিভ। জেলায় চিকিৎসাধীন আছেন ১৪ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ জন।

---------